ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ০৬ জুন ২০১৯ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে অভিযুক্ত করে এর যথোপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ফিনল্যান্ডের রাজধানীতে গতরাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ষড়যন্ত্র করে এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্র্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এই অপপ্রচারের ‘যথোপযুক্ত জবাব’ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত তাদের বিদেশে পাচার করা বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের দ্বারা বিত্তশালী হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই অর্থের সাহায্যে তারা বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র বিদেশীদের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন,‘যারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সফল হবেন তাদেরকে দলে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।’শেখ হাসিনা যে যেখানে বসবাস করছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি পরামর্শ দেন।
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দের সঙ্গে বলেন, লাখ লাখ মানুষ তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আপনজনের সঙ্গে নিরাপদে পবিত্র ঈদ উদযাপন করেছে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রায় জনগণ প্রায় যানজট মুক্ত পরিবেশে রাস্তায় চলাচল করেছে, একইসঙ্গে রেলপথ, নদীপথ এবং আকাশ পথেও তাদের চলাচলের সুবন্দোবস্ত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং জনগণ যার সুফল পেতে শুরু করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি- কেননা জাতির পিতা তাঁর সারাটি জীবনই বিপন্ন জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষতায় এসে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে একটি উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে পরিণত করে, কিন্তু এরপরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আবার ক্ষমতায় এলে দেশটি পুনরায় খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদকে অন্যদেশের কাছে বিক্রি করে দেয়ার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। বিএনপি-জামায়াতের সেই সরকারের সময় দেশের নিয়ন্ত্রণহীন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ তখন বিশ্বে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যম্পিয়ন হয়েছিল।’ বিএনপি-জাময়াতের সেই দুঃশাসন এবং অপকর্মের জন্যই পরবর্তীতে এক এগারোর সৃষ্টি হয় এবং দেশে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসে।
প্রধানমন্ত্রী সেই তত্ত্বাবধায়কের আমলে তাঁর দেশে ফেরার বিষয়ে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রবাসীদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে যা বহিঃবিশ্বে দুর্ভিক্ষ, ঘুর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অতীত পরিচয়কে মুছে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’তাঁর সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, কোন একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, কেউ গৃহহীন থাকবে না।
দেশবাসীর কর্মসংস্থান এবং দেশের শিল্পায়ন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের দেশব্যাপী একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক জাপান সফরকালীন চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এসিসটেন্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরের প্রসংগ তুলে ধরে বলেন, ‘এটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’ ‘এছাড়া, সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরে পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে তাঁর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়,’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ এবং ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আলী রমজান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ের প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে একটি কনসুলেট অফিস খোলার প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।
Leave a Reply